Wednesday, 5 September 2018

কবি শুভদীপ পাপলু-র এক গুচ্ছ কবিতা



কবি-পরিচিতি :  শুভদীপ পাপলু-র জন্ম ১৮ নভেম্বর ১৯৮২ , হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। বাবা পেশায় ব্যবসায়ী,মা গৃহবধূ।কবিতার আবহেই বড় হয়ে ওঠা । লেখালেখির সূচনা ছোট থাকতেই। প্রথম যৌথ কাব্যগ্রন্থ 'প্রতীক্ষা' প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। সে সময় থাকলেও,বর্তমানে পদবীশূন্য।২০১৮ সালে শব্দসাঁকো থেকে যৌথ কবিতাপুস্তিকা 'কড়ি বরগায় প্রশান্ত ঢেউ-সমাপ্তিকা' বের হয় কোলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায়। বর্তমানে শহর কলকাতা,মফঃস্বল ও গ্রামাঞ্চল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা এবং ব্লগজিনে লেখালেখির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বিয়ে ২০১৩ সালে,স্ত্রী শিক্ষকতার সহিত নিযুক্ত

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


১। চৈত্রে
    *****

ভুলে গেছি প্রতিকার,আসমানজমিন নীল ভিডিও-
প্রাপ্তি হিসেবে উল্কি আঁকা;উভয়ই নিখুঁত বরোজ,
শূন্যস্থানে সিঁটিয়ে থেকে ওতপ্রোত;ভজন শিখিও
যেভাবে পড়া মুখস্থ হতো কলিংবেলে;কিন্তু যমজ।

গর্বে যারা ভুল করলো,চাঁদে নামালো অস্ত্র সহযোগী
হত্যায় হত্যায় গোটা কাহিনী লুন্ঠিত হচ্ছে। যার
ধ্বংস পেয়ালা রাতে,চুলের নিঃশ্বাস নেয় ভর্তুকি
আর বিশ্বাস,যাকে সংখ্যা হেনেছে নিঃস্ব অপপ্রচার। 

এ মণি সাপের,বাক্যে দংশন ছোঁয়াও পরিক্রমা।
তখন বিষাক্ত হয়েছি,ও মরেছি চতুর যোগ্যতায়।
আজকে মোচ্ছব চলছে,তর্কে শুকোচ্ছে পাজামা--
আর;রবীন্দ্রসঙ্গীত ভেঙ্গে অভুক্ত কাব্য,শুদ্ধ ডেরায়।

আত্মহত্যা মহাকর্ম,রক্তের দোষ উবে যায়, কর্পূরে-
'পাড়া জেনে গেছে,আমি মুখ ঘুরিয়েছি গত চৈত্রে

^^^^^^^^^^^^^^^


২। বৈরাগ্য
     ******

মৃদু আঁচ,টোল পড়া গালে,লিখেছে ছোটগল্প; শখে
বারণ শোনা বিরক্তের সাথে গুপ্ত মিলন ও নাবিক
স্মরণসভার প্রমান দিয়েছিলো,ঠোঁটের প্রতিপক্ষে--
যেভাবে নিথর বেহুলা,প্রাণ ফিরিয়েছিলো- সার্বিক।

এ দিনে,অর্থের দম্ভে,শেকল ভিন্ন ধর্মে ধার্মিক হলে
নেমেছে অক্ষর ঢল,মানুষ'ও চোখ ঢেকেছে,বরাবর
নগ্ন পাহাড়ার অসুখে,যখনই ভেঙ্গে পড়বে; তাকালে
ছেয়ে গেল দৃষ্টি,কিংবা শুকিয়ে গেল আস্ত সরোবর

থামি,আর এ বদ্ধ খ্রিষ্টাব্দ; নখেও কাদা-মাটি-পলি।
কিন্তু মাছের চোখ দেখলে অকস্মাৎ মৃত্যু আগাছায়
বিধাতা যৌণকর্মী,আর সে মধ্যান্তর জ্যোৎস্না ফালি
শুধু প্রণামী বাক্সেই বিভৎসতা হারিয়েছে, পরিচয়।

অন্ধকারের'ও কষ্ট আছে,নেভা এক দুস্থ তোষকে--
সমস্ত উপন্যাস পুড়ে গেছে;তোমার নির্জলা বৈশাখে

^^^^^^^^^^^^^^^^^^


৩। ফ্রম জিরো টু নিরো
    *****************

এ বেহালা,নিরোর সিট; রোমিও দগ্ধতায়
এ হেন ভ্রমে;কারা তোমার বাসর রাতে;ভয় পায়?

প্রবাদে রুকস্যাক;নিরো'তে সব অপেক্ষার শেষ
বাহন বর্জিত বিধাতা,এনজয় গুরু;অনুপ্রবেশ-

নরম সমুদ্র গভীরে,ডুবে ডুবে জল খেয়ে নিয়ে
আর্তি কিছু বেমানান হলেও,কুকীর্তি ভাসিয়ে...

কলোসিয়ামের প্রতিধ্বনী'তে নিজের ছায়া বেঁচে,
মোম নিভিয়েছি;শরীরি উপদ্রবের আনাচে-কানাচে

পিতার দেহ ঘিরে চলছে শব্দ প্রাচীন অগ্নিসান্ত্বনা,
হয়-কীট জন্ম দাও,নচেৎ ডিম্বাণু;বা খুনি এক বন্যা।

তুমি তো রডোডেনড্রন?পলাশ?রক্ত বিনুনির?
তুমি'ই তো আলাদিন?আকাংখা?দশা প্রায় শণি'র।

আচ্ছা নিরো;সত্যি কি ভায়োলিন?না অন্য বাহানা?
রাজধানী পুড়লেও,তোমার বুঝি ঘাম হয় না!

^^^^^^^^^^^^


৪। গুজব
     ******

...প্রত্যঘাতই শেষ সম্বল,কানে দিও না; গুজব। 

আবেগের ফুলশয্যায় আগমনী, অলিখিত। 
অনাসৃষ্টি রেগে গিয়ে,মূর্তি গড়তে শশব্যস্ত--

বাইনোকুলারে চোখ রেখে, কতদূর তুমি দেখবে?
কি তকমায় হবে জাগ্রত অথবা পাবে গৌরব...

...প্রত্যাঘাতই শেষ সম্বল,কানে দিও না; গুজব। 

পুরাতন দেশ, সবার; তাতে- মুচকি হাসির ফোয়ারা
খানিকটা বোহেমিয়া, খানিকটা মাটির কাঠগড়া--

কৃষ্ণ খেলতেন কুখ্যাত পাশা-দাবা।
শকুনি চাইতেন কলরব। 

...প্রত্যাঘাতই শেষ সম্বল,কানে দিও না; গুজব। 

কালের দারুণ নেশা,ফালাফালা করে দেয় অসুখ
আত্মার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলি, ওগো নিস্ক্রিয় বুক-

মৃত্যুটবেও অল্প দাসত্ব,জল পেয়েছিলো
ব্রাহ্মণ স্নায়ুতন্ত্রে দিয়ে গেছে- শব্দবৈভব

কিন্তু,এ সিন্ধু কিনারে,হঠাৎ মেঘ উঠেছে দেহ বেয়ে।  
বাঁচাও বাঁচাও অস্ত্রহীন; ঈশ্বর নীরব--

...প্রত্যাঘাতই শেষ সম্বল,কানে দিও না; গুজব।

^^^^^^^^^^^^^^^


৫। এ তিতাস কোনও নদীর নাম নয়
     *****************************

সেই-ই তিতাসের স্মরণে, তোমার ব্যস্ত রাজত্ব,পুড়ে খাঁটি হয়--
সেই-ই তিতাস;নির্ভয়ে ছাই হয়ে চলেছে কবে থেকেই, ভাগ্যদোষ ঢেকে...
নাহ্, একটাও ঝাঁপসা বিছানা রেডি নেই;হেরে যাই-
আর অসুস্থতায় অসুস্থতায়,তুমি ভূমিকণ্যা হয়ে চলেছো।

এর পরেও ঠিকানাবিহীন, নিচু বরিশাল
জ্যোৎস্নার অশুভ হাঁচি, কিংবা পৃথিবীর সন্তান প্রসবের জন্য ও,
আমার শুয়ে পড়তে ভয় করে না।
ঘন সন্ধ্যে হোলো,পারলে নষ্ট হতে চলো,
অথবা তোমার সাম্রাজ্যবাদ চলকে, ভেসে যাক কুরুক্ষেত্র!

প্রাকৃতিক প্ররোচনা,ভাগ্যবিধাতা;সাথে মৃত্যুদূত-অস্পষ্ট।
আয়না আগুনেই তিতাস, ওপর থেকে সরে যাচ্ছে দহন...
আর, আমি তো পাথরকুঁচি; জানিনা,কোত্থেকে উঠে এসেছি।

^^^^^^^^^^^^^^^^^


৬। ধাতুরূপ
     *******

'দৃশ্য ধাক্কায় কোষাগারের রাত বাড়ে, কৃষ্ণপক্ষে। 
গুপ্তবিদ্যায়,আগ্রহ বিদায়;নিশ্চিন্তে প্রণাম করো।
'সব মতিভ্রম সহ্য করেও; তোমার মাতৃভাষা কে
দেখেছি অনর্গল; হত সে আস্তানা,বারো কি তেরো!

খয়েরি প্রলোভন,ভাতে কার্ফু আরোপ;শব্দ দালাল
ভালোবাসা বাসি,হত্যা কার্যত নিচ্ছে;স্লিপিং পিল'
প্রেমিকা'র খোলা পিঠে,দাগ টেনেছিলো শীতকাল--
যারা ছুটি নিয়েছে,তারা বাতাস'কে 'দাস' শুনেছিল।

শিকারী দাঁড়ালো,যে জন্ম বিপদ হতে মুক্ত;সরাসরি
মৌখিক প্রহারে,ভিক্ষের শরিক সেজে গুলি চালায়।
আমার তো ঘর নেই,তবু কি বেপরোয়া হতে পারি?
রক্তাল্পতা আমি;বেচারা আত্মা,অপঘাতে দেহ পায়।

^^^^^^^^^^^^^^


৭। 'গুলজারিস'
     ***********

মৌসিনরামে শুকোই রাত
পাথর-ভাঙা ঘুমের রিল...
বারুদে ঠাসা ভেজা সাক্ষাৎ,
বেরিয়ে গেছে হাতের ঢিল।

নেই থেকেও অগুনতি সুর
'গুলজারিস'এ আটকে ঘাম...
কাব্য স্বয়ং রাত ভরপুর--
চোখে পড়েনি লেখার দাম।

জেনে গেছি আরও, স্বপ্নময়
বিভেদ থামাও আলোর রুম...
বুক কিনারে গীতিকার শোয়,
কপাল দোষে নেশার ধুম।

মৌসিনরামে বৃষ্টি হঠাৎ,
ভিজে গেছে সব হাতের ঢিল -
বিস্ফোরনে শেষ সাক্ষাৎ,
পাথর ভাঙা স্মৃতির রিল...

----------------------প্রণমি জন্মদিনে-----------------



৮। পঙক্তি
     ******

নদী;সে'তো প্রবাদের দু'পাশে জুটে যাওয়া বিনুনি
শখে পরাগ লাগবে না,সে'রকমই নরম কারক--
তাই জীবন্ত দুরুদুরু;দু'একটা ঋণ রোদ পোহায়নি,
আর-সাইরেনের পক্ষে লুট,প্রথম পুরস্কার প্রাপক।

হয়তো মিছিমিছি দুই ধার,প্রাপ্তিযোগ কুড়িয়ে বৃথা
শ্রাবণে রচিত বোঝাতে,উষ্ণতায় ভিজে যাওয়া রব-
আর,নিজস্ব পরিচয় দ্বন্দ;বন্ধ প্রতি মিনিটের কাঁটা,
যেখানে নিষেধাজ্ঞার স্নানে,এ গঙ্গা থাকেনি নীরব।

ভাবি;সহজে চোখের ঘুমে সৃষ্টি ছড়িয়ে নির্ভয়া'কে
জানায়,সে-রাত পেয়েছিলো হরফের ভাঁজেই বারুদ
আর,প্রতিশোধস্পৃহায় অসমাপ্ত বৈশাখী মোড়কে
ও সিলিংয়ের রক্ত সোহাগে চলকে পড়ে দগ্ধ বুদ্বুদ।

প্রমানে টাঙানো স্মৃতি,ধীরে বওয়া নদী'র অপচয়
আর,মৃত্যু মিথ্যে;গোপন সম্পর্ক শুয়ে অববাহিকায়

^^^^^^^^^^^^^^


৯। যে'টুকু হিমোগ্লোবিন কম আছে,সেটা শ্রীজাত
     ***************************************

শ্রীজাত'র পেন বন্দুকবাজ, বেয়নেটহীন।
আমার পেন গুপ্তরোগের চিকিৎসায়,
হয়তো উধাও । যন্ত্রণা সে, শব্দহীন...
বোবা আলজিভে সর্বধর্ম সমন্বয়।

শ্রীজাত'র সুখ মানববোমার সুর রাঁধে।
আমার আঘাতে সিগারেট পোড়ে,দলছুটে।
গোলাবর্ষণ, খ্রিষ্টপূর্বের ঐ মগধে...
এখনও মরছি; ইস্তেহারের ল্যাম্পপোষ্টে। 

তৃতীয়ের কাঁধে চতুর্থ,ও পাঁচের কাঁধে ছয়...
উত্তরগুলো জেনে নিতে চায়, কোথায় চুল?
মেঘ বিশেষে, পুনরায় কেউ বৃষ্টি নামায়--
গোরস্থানে,আমার কবরে শায়িত ভুল। 

শ্রীজাত সাল,ও সেই ক্যালেন্ডারেই কাজ-
এবং; মহেশ্বরের জটা'কে করেছি শো-কজ,
তাই,বিদুর সেজে একমুঠো দাও যুদ্ধমেজাজ
যোগ দিয়ে দি'ই খ্রিষ্টাব্দের সব জেব্রা-ক্রস !

^^^^^^^^^^^^


১০। অন্য ভাষার কবি
       ***************

'পারে ছন্দ মেলালো, ডিলান বা বব। 

শোকের বায়োপিক তবু গোঙানি বর্জিত...
স্বরলিপি, গানের খাতায় নিশ্চিন্ত-নীপিড়িত--

মিনারে হেড-টেল স্বভাবে উল্টোবে, নীরবে শ্রীজাত অথবা চে'র বিক্ষোভ...

'পারে ছন্দ মেলালো, ডিলান বা বব।

সামান্য ভিঁটে;  গিটারে পৌরাণিক ধূপের মহড়া
একাংশ সোমালিয়া, বাকিটা অন্তর্যামী; সাহারা

অটল হতে পারতেন,কিন্তু বাজপেয়ী'র স্মরণসভা। এ গ্রহাণু গোত্রে সবই মিলিত সম্ভব।

'পারে ছন্দ মেলালো, ডিলান বা বব।

রাত ঘনতর, হওয়া-না'হওয়া কামড়ে ধরে বুক
প্রাক্তনে কোলাকুলি, বর্তমানে অসুখ--

প্রচার মাধ্যমও খুচরো স্পর্শ জুগিয়েছিল, 
বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল অক্ষম প্রসব

এ হাত গঙ্গা ছুঁয়েছে, উথলে পড়েছে পা-এ।
'পারে ছন্দ মেলালো, ডিলান বা বব।


No comments:

Post a Comment