''কবিতার ছন্দে '' ফেসবুক গ্রুপের ..
ওয়েব ম্যাগ..
ঈ-ছন্দ
তৃতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা
প্রতিষ্ঠা দিবস স্মরণিকা
19 শে মার্চ, 2020
সম্পাদনা :: রীতা রায়
প্রশাসক বর্গ ::
মৌসুমী ভৌমিক
রীতা রায়
কৌশিক কোনার
দেবার্ঘ্য চ্যাটার্জী
মানস খাঁড়া
অভিষেক দত্ত মজুমদার
সম্পাদকীয় ছন্দে,
বসন্ত বাতাস ফুলের গন্ধে
শব্দ ভাষা ভাবের দ্বন্দ্বে
যুক্তি আবেগ ভালো মন্দে
একাকার 'কবিতার ছন্দে'---
ছন্দময় জীবনের মননশীলতায় যে ছন্দ লুকিয়ে থাকে তারই কিছু কিছু উঠে আসে লেখনীর হাত ধরে কবিতা রূপে | ভিন্ন ভিন্ন মননশীল ছন্দ যখন একজোট হয় তখন প্রকাশ পায় কাব্যগাথার | ঠিক এই উদ্দেশ্যেই একদিন গড়ে উঠেছিল যুগোপযোগী 'কবিতার ছন্দে ' ফেসবুক গ্রুপ |
পথচলা শুরু 2017 সালের ঊনিশে মার্চ |
সময় ধারায় মিশে 'কবিতার ছন্দে' এগিয়ে চলেছে নতুন নতুন পদক্ষেপে | শুরুর দিনগুলোতে 'সাপ্তাহিক লেখক সম্মাননা' ও প্রশাসকবর্গের লেখা নিয়ে 'সাপ্তাহিকী' প্রকাশ করা হতো | পরবর্তীতে 2018 সাল থেকে এর পাশাপাশি শুরু হলো অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ অর্থাৎ ওয়েব ম্যাগ বা ব্লগজিন | সময়ানুকুল ওয়েব ম্যাগের মাধ্যমে খুব সহজে বিশ্বের সাহিত্য অনুরাগীদের সংস্পর্শে পৌঁছোনো সম্ভব | আজ কবিতার ছন্দে'র প্রতিটি ওয়েব ম্যাগ এর লেখা ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে পড়ে নেওয়া যায় শুধুমাত্র অনলাইনে লিংক ক্লিক করে |
2018 র জানুয়ারী থেকে বেশ কয়েকটি ব্লগজিন বের করা হয়েছে .. তার মধ্যে বেশকিছু স্বনামধন্য কবিদের লেখা নিয়ে ব্যক্তিগত ব্লগজিনও রয়েছে | এসকল গুরু দায়িত্ব সামলেছে সুদীপ্ত সেন ও মানস খাঁড়া | তবে, পূর্ণাঙ্গ আকারে ই-বুক প্রকাশ শুরু হয় 2018 র অক্টোবর মাসে শারদীয়া সংখ্যা 'ঈ-ছন্দ' প্রকাশের মধ্য দিয়ে | সম্পাদনার দায়িত্বে ছিল মৌসুমী ভৌমিক | বৈদ্যুতিন ক্রিয়াকলাপ ও প্রকাশনার দায়িত্বে মানস খাঁড়া |
এর মধ্যে আমরা মোট সাতটি 'ঈ-ছন্দ' প্রকাশ করেছি | বর্তমান সংখ্যাটি নিয়ে মোট আটটি সংখ্যা ও পূর্বের পাঁচটি ব্লগ জিন | সম্পাদনার দায়িত্ব কখনো মৌসুমী ভৌমিক কাঁধে নিয়েছে,কখনো রীতা রায় |
দেখতে দেখতে 'কবিতার ছন্দে' ফেসবুক গ্রুপ তিনটি বর্ষ পেরিয়ে চতুর্থ বর্ষে বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে আঙ্গুলার্পণ করতে চলেছে | আগামীতে নিশ্চয় কোনো নতুন কিছু প্রকাশের ভাবনা চিন্তা রয়েছে | ইতিমধ্যে 'কবিতার ছন্দে' হোয়াটস এপ গ্রুপ দ্বিতীয় বর্ষে পড়েছে |
বর্তমান 'প্রতিষ্ঠা দিবস স্মরণিকা সংখ্যা'য় যারা লেখা দিয়েছে তারা কেউই প্রথিতযশা কবি নন , তবে তাঁদের প্রত্যেকের লেখা সমৃদ্ধ করেছে পত্রিকাটিকে | প্রতিবারের মতো এবারেও বেশকিছু নতুন মুখ দেখতে পাচ্ছি , তাতে পত্রিকার একঘেয়েমি দূর করে শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে | ধন্যবাদ সকল লেখক বন্ধুদের | প্রশাসকবর্গের সকলেই সহযোগিতা করেছে | তাদের লেখাও সমাদৃত হয়েছে | আর যাদের লেখা নিতে পারলাম না তাঁরা পরবর্তীতে কবিতার ছন্দের সংস্পর্শে থাকবেন বলে আশা রাখছি | ত্রুটি মার্জনীয় | সবার শুভকামনা ও সহযোগিতায় এই গ্রুপটি এগিয়ে চলুক |সবার জন্য রইলো 'একুশে মার্চ' আন্তর্জাতিক কবিতা দিবসের শুভেচ্ছা |
ধন্যবাদান্তে--
রীতা রায়
19-03-2020
-----------------------------------------------
সূচিপত্র
কবিতা : লেখকের নাম :
---------- --------------------
1. তোমার স্বপ্ন মল্লিকা সরকার
2. সহে না যাতনা তপন তরফদার
3. বিজয় ইতিহাস ইমরান শাহ
4. কবিতার ছন্দে' বর্ষপূর্তি চন্দ্রিমা মুখার্জী
5. বর্ণপরিচয় রথীন পার্থ মন্ডল
6. সংকেত কৌশিক চক্রবর্তী
7. অধিকার অনিতা ত্রিবেদী
8. উত্তর নাসির ওয়াদেন
9. শুধু বেঁচে আছি ভক্তগোপাল ভট্টাচার্য্য
10.জীবনকে ফিরে দেখা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়
11.ভূত শিক্ষাগুরু পিনাকী রঞ্জন মিত্র
12.দ্বিকষ্ট মিজানুর রহমান
13.তুমি আমি দেবিকা দাস (নস্কর )
14.মেঘ রোদ্দুর খেলা শংকর হালদার
15.চক্রভেদ শ্যামল পাড়ুই
16.স্বচ্ছতা নির্মাল্য ঘোষ
17.পাতালঘর শম্পা পাল
18.ইচ্ছার যাপনে আব্দুর রহমান
19.কোনো এক বিকেল সৌরিন ভট্টাচার্য্য
20.সাগরকে ভালোবেসে স্বপ্না ধর চৌধুরী
21.বহুদিন পর সোমনাথ সরকার
22.দাবার চাল শাহানুর হোসেইন
23.কাটে কেমনে রূপা
24.আমি সেই কবি দীপক ব্যানার্জী
25.কবিতা তুমি কাজল মন্ডল
26.মেঘের বিয়ে সুদীপা ব্যানার্জী
27.কৃষকের নববর্ষ লক্ষ্মীরাম হাঁসদা
28.অপেক্ষাতে ভয় পলাশ নস্কর
29.মালতী কৌশিক কোনার
30.ফাগুন ডঃ রমলা মুখার্জী
31.রংবাহারী নীলেশ মাজি
32.খোলা জানালা অমিতাভ মীর
33.হোলির উচ্ছ্বাস ভারতী ধর
34.বসন্তের মিলন সুনীল কুমার মন্ডল
35.আমি সেই বসন্ত অঙ্কুর
36.হলুদ বসন্ত কবিতা ভট্টাচার্য্য
37.বসন্ত দখিনা সমীরণে বিপ্লব গোস্বামী
38.বসন্ত সুজন মন্ডল
39.বসন্ত বিকেল মৌসুমী ভৌমিক
40.পাগলা হাওয়া সমীর দত্ত
41.তুমি ভিজতে চেয়েছিলে সৌমিত্র চ্যাটার্জী
42.স্বপ্ননীড় কৃতিকণা
43.না বলা অথবা রিভু চট্টোপাধ্যায়
44.অদলবদল অভিষেক দত্ত মজুমদার
45.ফাল্গুনী প্রাপ্তি আল্পনা চন্দ
46.প্রেম ফটিক চৌধুরী
47.নিমিত্ত মাত্র সুদীপ্ত সেন
48.কৃত্রিম ভালোবাসা রীনা ঘোষ
49.আলাপ কাঞ্চন বর্মন
50.কথা না রাখার কথা সুকান্তপুলক বিশ্বা
-------------------------------------
১.
তোমার স্বপ্ন
কবি মল্লিকা সরকার
তোমার স্বপ্নরা আজও বেঁচে আছে ..
কখনো তারা ধরা দেয় আঁধার রাতে..
স্বপ্নরা বলে , ''আর কতকাল স্বপ্ন হয়ে থাকবো ?
কবে বলো আমরা আলোয় আসবো ?''
তুমি তো চেয়েছিলে বারবার ..
শুধু আবেগে নয়, বাস্তব কঠিন শপথে
তুমিতো চেয়েছিলে মুক্তির আকাশ ..
যেখানে সবাই শোষণমুক্ত ও চিন্তায় স্বাধীন,
নারীরাও স্ব স্ব ক্ষেত্রে সংগ্রামে আসীন |
তবে নিছক নারী হিসাবে নয় ..
সত্যিকারের মানুষ হিসাবে গণ্য হবে
সামাজিক মর্যাদায় প্রাণ ফিরে পাবে |
সত্যের অপলাপ বিশ্বাস করোনি তুমি,
মেনে নাওনি বিশ্বাসভঙ্গ ও বিশ্বাসভঙ্গকারীকে,
একলা চলার পথে কুঠারবিদ্ধ হয়েছিলে
বারংবার সাবধান করেছিলে সবাইকে ..
সে কী নিঠুর ব্যথা বুকে নিয়ে
নিজেই নিজের পথ খুঁজে নিলে ,
আর চলে গেলে মহাপ্রস্থানের পথে ..
তোমার সে ব্যথা ধায়ছে মহৎ পানে,
জাগছে অনুরণনে সত্য-সংগামীর পানে|
ঘরে ঘরে তোমার স্বপ্ন যে সত্যিই .
একদিন ফুল হয়ে ফুটবে কাননে..
( আপোষহীন ধারায় স্বাধীনতা সংগ্রামী 'বিজয় দাসগুপ্ত' স্মরণে )
২.)
সহে না যাতনা
কবি তপন তরফদার
হলুদ আলোয় রজনীগন্ধার মালা পরে
কানাগলিতে বক্সে বক্সে সংগীত শুনে
ফিউশনের জারকে তুমি জর্জরিত।
এখন শুধু পটে আঁকা ছবি নও, বিকিয়ে গেছ ডলারে।
তোমার ব্রহ্মচর্য্যের ছাতিমতলার উপাসনার মাটি
খোয়াই এর নুড়ি-পাথর দূষিত দোলের আবিরে।
পলাশের পাপড়ি পায়ে পায়ে পদদলিত
কোকিলের কুজনে কোটেশান ভেসে ওঠে আকাশে।
ঋষির বাণী - হাততালি, ফানুস চুপসে যায় গগনে
আমরা তোমার কথা বলি - কথা রাখিনা।
শরীরের শিরা উপশিরায় অনুভবের আবেশে
দ্যুতিগন্ধ ভরা নিঃসার চেনা-অচেনার
ঝরাপাতার শব্দ - শুধুই আমির আমি।
এই দহনকালে - অর্ধলক্ষ পার করা
‘দিবস রজনী’ - সহেনা যাতনা।
প্রাণেতে প্রতিষ্ঠা করার এই তো মাহেন্দ্রক্ষণ
চোখ ধাঁধানো আলোর অন্ধকার নয়
চাই, উজ্জ্বল রবির কিরণ - চাই সর্বত্রই।।
৩.)
বিজয় ইতিহাস
কবি ইমরান শাহ্
এ বিজয়ের জন্য বাঙালী নয়টি মাস
করেছে কত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ,
কতজনে হারালো ঘরবাড়ি আর
কেউ কেউ ভিটেমাটি সুদ্ধ |
মার্চে দিল মহান নেতা রেসকোর্সে
কালজয়ী জ্বালাময়ী ভাষণ,
সেই সে গর্জনে কেপে উঠলো
ইয়াহিয়া ভুট্টোদের আসন |
জাতির পিতার নির্দেশে ঝাপিয়ে
পড়লো দেশের আপামর জনগণ,
হানা দিয়ে শত্রু শিবিরে ছিনিয়ে আনলো
দেশমাতৃকা, বিলিয়ে লক্ষ প্রাণ |
সেই থেকেই বিশ্ববুকে স্বাধীন এ'বাংলা
রচিয়াছে বিজয়ের করুণ ইতিহাস,
শত বেদনা লুকায়ে দশকের পর দশক
পালিত হয় বিজয় দিবস |
৪.)
কবিতার ছন্দে' বর্ষপূর্তি
কবি চন্দ্রিমা মুখার্জী
ফাগুন বেলার নবীন আবেশ মেখে..
কবিতার ছন্দ, তিনটি বছর কাটিয়ে দিলো বেশ,
এই দিনটা বছর বছর আসুক
জড়িয়ে থাকুক খুশি, আনন্দময় রেশ।
আমরা সবাই অপেক্ষায় আছি
রজতজয়ন্তী পূর্তি উৎসবের..
মোদের খুশি সবার খুশি মিলে
পূর্ণতা দিক এ আনন্দযজ্ঞের।।
৫.) বর্ণপরিচয়
কবি রথীন পার্থ মণ্ডল
ভিতর থেকে ভিতরে এখনও বেজে ওঠে
অ আ ক খ - আলো গান, একটা ইতিহাস।
যেন দীর্ঘ অন্ধকার শেষে নক্ষত্রপাঠ
এক আশ্চর্য নিদান, নিরক্ষর পথে পথে।
শুরু হয় বিচ্ছুরণ, প্রতিটি বর্ণের থেকে
অক্ষরে অক্ষরে প্রকৃত সন্ধান।
বাক্য মনের গঠন কিংবা নব জাগরণ
পথ করে দেয়, চিনতে শেখায়।
কখনও রাখালের সুরে, কখনো সুবোধ ছায়ায়
প্রতিটি যুক্তাক্ষরেই যুক্ত হয় এক মিলন মন্ত্র।
৬.)
সংকেত
কবি কৌশিক চক্রবর্ত্তী
উঁচিয়ে ধরেছ একালের আঁশবঁটি
হোক না যতই পাখনাটি সংকেত,
উড়তে শিখেছ আমাদের ডানা জুড়ে
নষ্ট হয়নি ওড়ানো সে'সব ভেট |
কথা দিয়েছিলে ডানা জোড়বার আগে
ফলা থেকে তুমি ছিনিয়ে আনবে গলা,
যখন ফেরেনি কেউ আশেপাশে আর
তুমি ভেবেছিলে আমিও রজঃস্বলা |
ভেঙেছিলে বঁটি, কেটেছিলে আঁশ হাতে
দরদাম করে কিনেছিলে লেজা-পেটি,
আমার জন্য এনেছিলে যত আনা
তেমন মূল্যে জোটেনি পাপড়ি চাটই |
বৃষ্টির কাছে ক্ষয়ে যাওয়া বড় ভালো
আঁকবেনা কেউ দেয়ালে সেই কার্টুন,
বরং তুমিও একা একা বোর হলে
সাঁতারের জলে গুলে নিয়ো কালো নুন |
৭.)
অধিকার
কবি অনিতা ত্রিবেদী
ছোট্ট একটি শব্দ "অধিকার "
যাতে বন্দী হ'য়ে আছে --
শত সহস্র শত কোটি
বাক্যের সমাহার ।
যুগ-যুগান্ত ধরে চলেছে-
যে অধিকার ল'য়ে সকল মনের অঙ্গীকার,
'জিনিয়া লইব মোর, জীবনের সব ভোর
দূর করি তিমির-হতাশা-হাহাকার ।
তবু আজো আছি পিছে ,
"অধিকার" দলিত হয়---
স্বার্থান্বেষী সমাজের কাছে
"অধিকার" ফিরে পায় প্রতিপদে ভয়!
আজো পথে শিশু কাঁদে
শৈশব তার ফাঁদে-ফাঁদে ।
জীবনের দেহখানা বড় হয় শুধু
রুঢ় -ডঙ্কার নিনাদে ।
"অধিকার" সেথা কেঁদে-কেঁদে মরে
ফেলিয়া দীর্ঘ-শ্বাস ।
অধরা থাকে চাওয়া-পাওয়া তার
মিটেনা মনের আশ ।
"অধিকার" কারে কয়--
বুঝি আজো জানেনা কোন গৃহবধূ ।
হাসিভরা মুখ তার কবে,কখন হয়েছে মলিন ,
ছুঁয়ে দিয়েছে কে বন্দী-চাবির যাদু ।
এত সোরগোল চারিদিকে-
চাই-"নারী অধিকার ।"
'নারীরে যারা করে অপমান',
জানাই তাদের ধিক্কার ।
বৃথা সব হুঙ্কার -----
সুর তোলে যে নর, নারী প্রতিবাদে
জীবনের ধাপে-ধাপে তার --
তোমারি কাছে বন্দী রেখেছ তার
শত অধিকার ।
"অধিকার-অধিকার" রবে ----
আরো বলি তবে ,
আর্ত-প্রান আজো কেন কাঁদে ?
সভ্যতার চিরানন্দ এ-ভবে ।
দিশাহীন অধিকার তবু--
বাঁচিয়া রহিতে চাহে-
শত-বাধার জয় আশে ,
হার নাহি মানে কভু ।
কেহ দিক্ তারে অধিকার
কিবা নাহি দিক্ ।
আপন স্বতন্ত্র মনে --
বাঁচিয়া থাকে ঠিক ।
তাই ফিরে পেতে চাই 'অধিকার'
নির্ভয়ে পবিত্র-সুন্দর সব কাজে ।
ফিরে পেতে চায় সুবিচার
প্রতি মানুষ, মানুষের-ই কাছে ।
"অধিকার" তুমি কভু হয়োনাকো ম্লান
প্রতিটি জীবন মাঝে ।
মিনতি করি সর্বশক্তিমানে--
যেন প্রতিটি জীবন, সততার অধিকারে বাঁচে ।
"জননী না হয় কভু অনাকাঙ্খিত "
সন্তান কাছে তার ।
সকল অশুভ শক্তি
শুভোদয়ে মানুক হার ।
আমি নিতান্ত-অবোধ এক নারী
তবু এটুকু তো বলতেই পারি--
অনেক হয়েছে আর নয়,
সমাজ! সভ্য আলোয় দাও পাড়ি ।
৮.)
উত্তর
কবি নাসির ওয়াদেন
উত্তর আজও নিরুত্তর, জানা নেই কোনো তথ্য
পিছনেই হাঁটি সত্যের পথে, কথাটা সরল সত্য |
আঁধারের হাত ধরে হাঁটে যত আজগুবি, অসত্য
মিথ্যের জ্বরে কাঁপে হাত-পা, ঘটে যা নিত্যানিত্য |
উত্তর চিরকালই ব্রাত্য, অপাংক্তেয়, অনাদৃত
দক্ষিণ ধার তীক্ষ্ণ কশান, শক্ত আর মজবুত |
আমি নিশ্চিত নেই কোন দক্ষিণপন্থার
হেঁটে দেখা হয়নিকো কোন বামপন্থার |
উত্তরপন্থা বলে কিছু থাকতে নেই এই মর্ত্যে
খাকি দেশলাই, খেঁকি শেয়ালের ক্ষীণ গর্তে |
নিত্য যেখানে ডুবে শুধু মরি, এ ঘনঘোর উৎকণ্ঠা ..
উত্তর তুমি আছো উত্তরে, উত্তরই শেষপন্থা |
৯.)
শুধু বেঁচে আছি
কবি ভক্ত গোপাল ভট্টাচার্য
হঠাৎ চমকে উঠলাম !
গা-হাত-পা শিউরে উঠলো..
লক্ষ লক্ষ মানুষের অন্তরাত্মা কেঁদে উঠলো ..
খুঁজতে গিয়ে দেখি সবকিছু চুপ হয়ে গেছে
এইসব মানুষের ক্ষুধার নিরসন কে ঘটাবে ?
কেননা, সবার প্রবণতা সমান |
সুন্দরতম মন কল্পনায় বিভোর
আকাশ বড়ো একা
চেনা মানুষ যায় না চেনা
মুখোশ ঢাকা মুখগুলি
সর্বদা উঁকি মারে রহস্য ! পারবে না,
তারা সবটাই ঠিকঠাক গ্রহণ করছে...
দিনগুলি সব হারিয়ে কেবল
স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা ...।
১০.)
জীবন কে ফিরে দেখা
কবি ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়
ঈশ্বরকে ডেকেছো কখনও?
কিছু না চেয়ে মন থেকে,
বাবা-মাকে বেসেছ ভালো?
কিছু পাওয়ার আশা না রেখে।
স্ত্রীকে কখনো কাছে টেনেছ ..
ভোগের বস্তু না ভেবে,
সন্তানের দুঃখে কষ্টে রেখেছো
কি যত্নে বুকে।
পাড়াপড়শির বিপদে-আপদে
বাড়িয়েছ কি তোমার হাত,
কর্কট রোগ ভুগছে পরিচিত কেউ, দিয়েছো কি তাকে সাথ।
তোমার বাড়ির ঠিকে ঝি ..
যে মুখ বুঝে কাজ করে,
ভুলেও বলেছ কি?
পাশে আছো অসুবিধায় যদি পড়ে।
বিক্রিওয়ালা বাড়িতে বারো মাস আসে যায়,
একদিনও বলেছ কি তাকে?
চা, জলখাবার খাবি আয়।
পাশের বাড়ির মেয়েটা রাত করে রোজ ফেরে,
চিৎকার-চেঁচামেচি লেগেই থাকে রোজ তাকে ঘিরে।
জিজ্ঞাসা করেছো কখনো ওর বাবাকে
কী অসুবিধা আপনার?
চোখ বুজে দিব্যি আছো,
যা হচ্ছে হোক কি দরকার আমার।
উদাহরণ আছে অনেক ভরবে..
পাতার পর পাতা,
গর্ব করি মানুষ আমরা,
জীবনটা যে গেল বৃথা।
১১.)
ভূত শিক্ষা গুরু
কবি পিনাকী রঞ্জন মিত্র
কেউ কি দেখেছো খুঁজে --
ভূতের হৃদয়ব্যথা কেন গেছে বুজে?
ভূতের ঘরে জ্ঞানের তাকে হাজার আলমারি
শিক্ষা ছাড়া সামনের পথ অনেকখানি ভারি।
ভূতই হলো শিক্ষাগুরু জানতে খুঁজতে যাবে
ভবিষ্যতের পাহাড় ভেঙে পথ, সুড়ঙ্গতেই পাবে ।
তাই বলি গো ভূতকে বৃথায় ভয়
ভূতের শিক্ষা মনে করেই এগিয়ে যেতে হয়
ভূত গুলো সব অর্বাচীন মাটির নিচে ঘর
অচিন পথে বাজপাখি নেই, নেই গুপ্তচর ।
ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
কালের দেহে তিনটে রং আঁকে
একটি গেলেই অন্যে আসার পালা
শূন্য থালায় বর্তমানই থাকে।
ভবিষ্যতের ভাঙ্গতে সিড়ি
দিতেই হবে হামাগুড়ি ভূতের আঁধার ঘর
কি আর এমন জমবে ব্যথা বর্তমানের 'পর।
তারও চেয়ে বেশি ব্যথা সেঁটে আছে ভূতের দেওয়াল
উল্টো দিকে ঘুরিয়ে চাকা রাখতে হবে একটু খেয়াল ।
অনেক রত্ন আছে সেথায় যত্ন করে রাখা
ভবিষ্যতের ইমারতে রত্ন গুলোর থাকা
প্রগতির রথের চাকায় গতির প্রয়োজনে
ভূতের উপর ভিত্তি করে এগোয় সুধীজনে ।
১২.)
দ্বি-কষ্ট
কবি মিজানুর রহমান
আমি উহ করিনা;
মুক হয়ে গলায় রক্ত তাজা…
সত্য বাধা ওদের কানে।
নীরব অশ্রুতেই স্নান।
কঠিন আজাব ওদের জন্য
এখনও সবটাই নগণ্য
শৃঙ্খল মোচন প্রশ্নের ঘরে
দৃষ্টি রাখতে হবে কষ্টে।
অঙ্গে যন্ত্র চালন
বিলাসে শরীর ওদের…
তপ্ত ভূমিতে যখন খান খান
ওরা নুতন খোঁজে!
সংকীর্ণ সময় আর
মন থমকে এখনও !
মোর অন্তিম কষ্ট যে হাসবে
ওদের শেষের সুখ উষ্ণ জলে।
পেশাই হয়ে যাবে
সবুজ অভাবে গরল...
প্রেম ছুড়বেনা জীবন্ত জড়
প্রছন্ন তখন আমার কষ্ট।।
১৩.)
তুমি আমি
কবি দেবীকা দাস (নস্কর)
তুমি-আমি হাঁটছি দ্যাখো বেশ
হয়তো আবার ঝড়ের উদয় হবে
নতুন করে উড়বে ধূলো কত
হয়তো কোনো যুদ্ধ হবে শেষ ।
আকাশ পথে উড়ছে জাহাজ কত
তুমি আমি চেয়েই শুধু থাকি ,
ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া সহজ
শিক্ষিত আজ ঘরে শত শত ।
চাকরি তোমায় কোথায় গেলে পাই
জীবন শেষে কোথায় হবে ঠাঁই।
থাকবে বাকী কত না বলা কথা
হিয়ার শুধু থাকবে ফাঁকা মাথা ।।
১৪.)
মেঘ-রোদ্দুর খেলা
কবি শংকর হালদার
শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা কপাল সায় দেয়
নত হয়ে সয়ে নেয় সবকিছু,
জীবনের শেষ রায় ঘোষিত হওয়ার
ঠিক আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ।
শরীরের গল্প, গল্প-ই নয় বাস্তবও বটে
কখনো সখনো গোলাপের হাসি মুখে ফুটে ওঠে
আর বিলাসিতাময় জীবন লুকোচুরি খেলে
মেঘ-রোদ্দুর ছায়ায়।
কেনা জানে, জীবনের রহস্যঘেরা ইতিহাস
ঠিক যেন মেঘ-রোদ্দুর খেলার মতো ...
১৫.)
চক্রভেদ
কবি শ্যামল পাড়ুই
কু-চক্রে অধঃপতন
নিদ্রা-চক্রে ঘুম,
পাপ-চক্রে পাতাল প্রবেশ,
আর ড্রাগ-চক্রে নিঃঝুম ।
কর্ম-চক্রে শ্রমজীবী
ধর্ম-চক্রে ভাষণ,
মধু-চক্রে মোক্ষলাভ
আর বধূ-চক্রে শাসন ।
সুদর্শন-চক্রে মুণ্ডচ্ছেদ
চার-চক্রে আমির,
রাজ-চক্রে সিংহাসন
আর নারী-চক্রে ফকির ।
ব্যূহ-চক্রে অভিমন্যু
রোগ-চক্রে বৃদ্ধ,
ভোগ-চক্রে সর্বনাশ
আর দালাল-চক্রে সিদ্ধ ।
ফোড়ে-চক্রে মূল্য বৃদ্ধি
ঋতু-চক্রে বর্ষা
জালিয়াত-চক্রে ধোঁকাবাজি
আর পার্লার-চক্রে ফর্সা ।
১৬.)
স্বচ্ছতা
কবি নির্মাল্য ঘোষ
আগুণ বেঁধে বেঁধে
আজকে এখানে...
এভাবেই পথচলা...
টিঁকে থাকা...
একটু হিমালয় ছোঁয়া..
তারপর আবার নদী...
আশপাশে স্বচ্ছতা অভিযান..
নদীর পাড়ে ঘুমন্ত আত্মা...
অপরিষ্কার...
কেউ দেখে না..
দেখা যাক কতদিন
পরিযায়ী হাঁটে...
১৭.)
পাতাল ঘর
কবি শম্পা পাল
এইটুকু যা ভাবলাম
প্রতিটি জীবিত অক্ষর জানে
তারপর শেষকৃত্য
ছিড়ে ফেলো প্রথম কবিতা সংকলনে লেখা কবিতাগুলো ......
হদিশ খোঁজা হৃদয়
এখন মাঝে মাঝে একা হয়ে যায়
উপায় নেই
পাতাল ঘর আমি রেখে আসিনি
১৮.)
ইচ্ছার যাপনে
কবি আব্দুর রহমান
ইচ্ছার যাপনে মুখোমুখি সন্ধ্যায়
নেমে আসে রাতের নীল আলো
টেবিলে রাখা গ্লাসে নীলনকশা
হয়ত নতুন একটা অপেক্ষা,
সার্জিক্যাল কথার সুবাসিত পৃথিবী যাপন এখন অতর্কিত ইচ্ছার ফল
শিশু কন্যা বুড়ো বুড়ি স্বপ্নবিভোর কলেজ পড়ুয়া
বেঁচে থাকে মেখে বারুদের গন্ধ
চোখের সামনে ভাসে অবিশ্বাস্য, ঘৃণার পাহাড়
কী সুন্দর এই আকাশের নীচে তৃপ্তির সুপ্তিরা
কী সুন্দর যাপন শিশু কোলে মা ছড়ায় সৌরভ l
কী সুন্দর আলো অন্ধকারে বাসভূমি জীবন সোপান
অথচ..
কী নেশায় দর্পিত কল্পিত বিভ্রান্তি ডেকে আনে ঘৃণা
কর্তৃত্বের রোগ করে ভেঙে খানখান জীবনের গান |
১৯.)
কোনো এক বিকেল
কবি সৌরিন ভট্টাচার্য্য
ঝিরিঝিরি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে চলেছে
কফির কাপ থেকে ওঠে মিহি ধোঁয়া,
প্রিয়াঙ্কা নিখোঁজ সাতটি দিন পেরোলো
জাজিমে ভুলু অনিদ্রায় আধশোয়া।
জানি না, নারীদিবস কেন পালিত হয়,
সংবাদপত্র দেখে কন্ঠ হয় রোধ
'উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট' সোনার চামচ,
নিশ্বাসে প্রশ্বাসে নির্গত হয় ক্রোধ।
জানি না, কোন্ বিকেলে সব মুছে যাবে;
নির্যাতন, অসাম্যতা, দ্বৈরাচার ও গ্লানি,
অর্ধনারীশ্বর দেবের বেদীতে রাখি ফুল
স্বপ্ন-পৃথিবীর ছবি আজও তাই..?
২০.)
সাগরকে ভালোবেসে
কবি স্বপ্না ধর চৌধুরী ।
ফুরালো দিন, আসছে নবীন আলোর পালে পালে,
দারুণ মন.. ভাবছে প্রবীণ, ফুরালো কালে কালে!
সহসা বায়ু জাগায় আলো সাগর তলে তলে,
ললিত গীতে মৃদঙ্গের ছন্দ সাগর জলে দোলে!
আধো চাঁদের রূপসা মহল মধুর হলো গো মধুর ,
আলো-ছায়ার পত্র লেখা ছাপিয়ে দিলো সুদূর!
সাগর পারে তরাস তরে চমকি ওঠে মন ,
কহিনু ওই সাগর তোমায় ভুলবে না তো মন!
লবণ জলের সফেদ উচ্ছ্বাস বুক ভরে তুলি,
বলি তোমায় যাইনি আমি হৃদয়-দ্বার খুলি !
২১.)
বহুদিন পর
কবি সোমনাথ সরকার
বহুদিন পর তোমার হাতে হাত রেখে হেঁটেছি অনেকদূর,
গন্তব্য ছিল না কোনও,
শুধু হাতে হাত রাখার অছিলায় ছিল হেঁটে যাওয়া,
নির্জনতা খুঁজেছি, গভীর শ্বাসে শুধু হৃদয় ভরাবো বলে,
বহুদিন পর তোমার গায়ে গা লাগিয়ে বসেছি অনেকক্ষন,
নিঃশব্দের ভাষায় বলেছি কথা হৃদয় থেকে হৃদয়ে,
তোমার মুখে দেখেছি দিগন্ত বিস্তৃত ভালোবাসার আকাশ,
সে আকাশে মুক্ত বিহঙ্গ আমি উড়েছি অনন্তকাল,
তোমার চোখে দেখেছি গভীর প্রেমের এক অতল সাগর,
সে সাগরে কেটেছি আমি অন্তহীন সাঁতার,
মনের আবেগে আলতো ছুঁয়েছি তোমার চুল,
তোমার চোখে চোখ রেখে দেখেছি এক নতুন পৃথিবী l
সুদীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে
পুরোনো সেই হৃদয় বাগানে
নেমেছে আজ এক অঝোর বৃষ্টি,
লেগেছে আবার নতুন প্রাণের ছোঁয়া,
নতুন করে ফুটেছে আবার ফুল l
২২.)
দাবার চাল
কবি শাহানূর হোসেইন
গল্পগুলো অন্ধগলির সান্ধ্য চায়ের চর্চাতে,
বেনিয়মে চর্চিত হয়, নিয়ম বিধির কসরতে।
ছন্দে সে যে গন্ধ ঢালে, মন্দ সে তো অল্প না,
গরল সব তরল হয়ে সরল মনের যন্ত্রনা।
ঝড় গড়ালো ভর দুপুরে, শান্ত না তা অন্তহীন,
যত গর্জায় তত বর্ষায়, লাগাম হাতে অর্বাচিন।
দুঃখ সে তো সূক্ষপথে দক্ষ চালে শেল হানে,
অন্যেরা সব হন্যে হবে, যার যাতনা সেই জানে।
চলছে এ যে দাবার খেলা, আড়াই কদম ঘোড়ার তাল,
সোজা বোড় বোঝা টানে, বাঁকা পথে মন্ত্রীর চাল।
পথে এবার এসো বাবা, চলবে না তো অজুহাত,
মোক্ষ লাভের শেষ দিনে, দক্ষ চালে হবে মাত।
২৩.)
কাটে কেমনে
কবি রূপা
বন্ধু বাড়ি যাবো বলে হচ্ছি যখন তৈরী,
ঠিক তখনি হলি কেন এমন নিঠুর বৈরী ?
ভাবছিলাম, কোন শাড়িতে হবো আজ নবরূপে সৃষ্টি,
জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, একী অনাসৃষ্টি ?
হিংসুটে তুই কেন রে এমন ঝমঝমিয়ে পড়লি ?
তখনি কেন দোরে আমার অঝোরে কেঁদে মরলি ?
ভালোবাসি বলে কি হায় এমন করতে আছে ?
তুই ছাড়াও তো আমার ওরে বন্ধু আরো আছে |
সারাদিনতো কাজের ফাঁকে তোকেই দেখেছি..
ফিরলি বুঝি নিজের ঘরে সবে তখন ভেবেছি |
জানলা থেকে যেই না আমি একটু ঘুরেছি
অভিমানিনী তখনি আবার ঝমঝমিয়ে.. ছিঃ !
অপলক মোর ভালোবাসার নজর যে আজ চাই ;
অবুঝ মনের বিমুখ টানে তাল ফেরালি তাই ?
বুঝলি না তো দুঃখ আমার পালিয়ে একটু বাঁচে ---
তোর বীণাতে হৃদয় মাঝে জানিসতো বিরহ ব্যাথাই বাজে |
এমন দিনে একলা ঘরে কেমন করে কাটে !
মন ছুটে যায় গোপন ব্যাথায় লুকাতে মানুষেরই হাটে |
আমার যাওয়া বন্ধ করে নিজেও ফিরে গেলি ---
ঘরের কোণে একলা রেখে বল --
কী সুখটা তুই পেলি ??
২৪.)
আমি সেই কবি
কবি দীপক ব্যানার্জী
হাতে কলম পেটে একরাশ খিদে
চোখে ধোঁয়াটে স্বপ্নের প্রলেপ
মনে কাব্যের ঝংকার
আমি সেই কবি, এ গল্প আমার ।
দুটো পোড়া রুটি আর একমুঠো ভাতের তাড়নায়
ম্লান হয়ে যায় সোনালী কবিতার দল
শূন্য হৃদয় যার করে হাহাকার
আমি সেই কবি, এ গল্প আমার ।
সংসারের যাঁতাকলে যে পিষে মরে
কবিতার ভালোবাসা দেয় জ্বালা
জীবনে যার নেই আলো শুধুই আঁধার
আমি সেই কবি, এ গল্প আমার ।
একদিকে সুখের নাচানাচি অন্যদিকে খিদের ঝাঁঝালো সুর
একদিকে বিষাদ পৃথিবী আর অন্যদিকে অফুরান আনন্দ
মাঝে কাব্যের অভিসার
আমি সেই কবি, এ গল্প আমার |
দগ্ধ জীবনে আসে মৃদু শরতের আলো
সে আলোয় মন করে ঝলমল
আবার ছেয়ে যায় কালো মেঘের পাহাড়
আমি সেই কবি, এ গল্প আমার ।
২৫.)
কবিতা তুমি
কবি কাজল মণ্ডল
একপাশে ক্ষেত, গাছ-গাছালি
আমাদের ছোট্ট গ্রামটি,
আর একপাশে নদী
বয়ে চলা এক নদী..
এরই মাঝে পথটি
মোরাম বিছানো রাঙা পথটি।
সেই পথে রোজ চলা..
কত কিছু বলা, না বলা
কতদিন ভাবি এ'সবেতে
পুরোপুরি হারিয়ে যাই..
কিন্তু কেমন করে হারিয়ে যাই..
জানিনা যে আমি হায়!
২৬.)
মেঘের বিয়ে
কবি সুদীপা ব্যানার্জী
পড়ন্ত বিকেলে যখন রবি যায় অস্তাচলে
অরুণিমা আলো দিয়ে যায় তার মেঘ বালিকারে ঢেলে ।
শ্যামলা বরণ মেঘবালিকা কুসমি শাড়ির সাজে
সিঁদুররাঙা মেঘবালিকা মুখ ঢেকেছে লাজে ।
আঁচল উড়িয়ে যায় সে ছুটে দূর থেকে আরো দূরে
তার মনেতে বাজে গো জলতরঙ্গ গুরু গুরু ঐ সুরে ।
নীলাম্বরীর আঁচলে তার ঋণ যায় শোধ করে
তার ভেজা চোখের বৃষ্টিদানা ঝরঝর ঝরে ।
কিছু সময় চাঁদের সাথে কালরাত্রি বাসে
সূর্য রাঙা উঠলে আবার মেঘবালিকা হাসে ।
২৭.)
কৃষকের নববর্ষ
কবি লক্ষ্মীরাম হাঁসদা
মাটির ভেজা গন্ধে ভরা,
নতুন আলো, নতুন ধরা।
আমি চাষা চাষ-ই বুঝি,
খিদে পেটে অন্ন খুঁজি।
খেত ভরা সোনালী ফসল,
বেকার জীবন হয়না সফল |
অন্ন উজারে অন্য হয়েছি,
ঋণের দায়ে গন্য হয়েছি।
দিয়ে শুভেচ্ছা হোক আচ্ছা,
অতীত সবই অতিথি ইচ্ছা।
নতুন দিলে পুরাতন নয়,
অতীত যে মোর হয়নি ক্ষয়।
উপায় হাতে উপরি কামাই,
নেই কি প্রকার হবে বালাই।
সকালে সূর্য চিন্তা বাড়াই,
দিনযাপন ভরাপেট ছাড়াই।
তোমার প্রেমে বিশ্ব জাগে,
আঁধার কাটবে সবার আগে ।
বাধা কাটিয়ে হবো বিজয়ী,
তুমিও হবে আবার শ্রীজয়ী ।
মাতবো আবার নতুন হয়ে,
তোমার প্রভাত কিরণ পেয়ে।
২৮.)
অপেক্ষাতে ভয়
কবি পলাশ নস্কর
পরীক্ষা হয়ে গেছে .. বেশ ফুরফুরে মেজাজ।
পড়ার টেবিল খালি সব বেহিসাবি কাজ ।।
সন্ধ্যা এখনো ঘুমায় হাতে ধরা অগ্নি।
সময় বেখেয়ালি হলো আনন্দ পাওনি ।।
অপেক্ষাতে ভয় পাও মাথায় ঘোরে শয়তান ।
জানলা পরে ছোট্ট আকাশ উজানে ওঠে বাণ ।।
কথার মালা বড্ড ভাবায় বইবো কেমনে ।
সস্তায় আমি পেশ হচ্ছি থাকবো স্মরণে ।।
২৯.)
মালতী
কবি কৌশিক কোনার
মালতী...
পাশের পাড়ায় থাকে,
টেনেটুনে ক্লাশ নাইন পাশ,
রোগা পাতলা অপুষ্ট শরীরে সূতীর শাড়ি।
বাপটা মরেছে অনেক দিন আগে,
ঘরে বিধবা মা।
তাই সংসারের অভাব অনটনে,
দুবেলা দুমুঠো ভাতের আশায় লোকের বাড়ি ঠিকে ঝি।
রোজ সকালে উঠে পাঁচটা কুড়ির ট্রেনে চেপে শহরের পথে,
পেটের বালাই বড় বালাই।
সস্তা শাড়ি,
সস্তা সুগন্ধী,
কপালে টিপ,
চুল বেঁধে মিশে যায় ব্যস্ত সময়ে।
এইতো তার আটপৌড়ে জীবন,
প্রেম
ভালবাসা
স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বাসন মাজা, ঘর গোছানো।
যদিও নিজের ঘর বলতে কিছুই নেই,
লোকের বাড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে,
শুধু নিজের জীবনটাই আগোছালো হয়ে গেছে,
হয়ে গেছে ভীষন রকম রঙচটা।
মালতী........
তবু বেঁচে আছে,
এও এক জীবন সংগ্রাম,
এও এক লড়াই।
আর এই যুদ্ধে মালতী
একাই অর্জুন,
একাই কৃষ্ণ,
একাই কর্ণ,
একাই অভিমূন্য,
কিংবা লক্ষ সেনানী,
আর তার বেঁচে থাকা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধমাত্র।
৩০.)
ফাগুন
কবি ডঃ রমলা মুখার্জী
ফাগুন মানে শিমূল পলাশে রাঙা,
অনুরাগ-রাগে সব অভিমান ভাঙা
ফাগুন মানে প্রকৃতি মানবে দোল-
হৃদয়ে হোলীর রঙিন হিল্লোল....
ফাগুন মানে হাল্কা শীতের চাদর,
শরীর মনে প্রথম প্রেমের আদর।
ফাগুন মানে অঙ্গে খুশির দোলা-
দ্বৈত - প্রাণের একসাথে পথ চলা।
ফাগুন মানে আগুন নিয়ে খেলা-
শুরু থেকে শেষ ভ্যালেনটাইন বেলা।
৩১.)
রঙ বাহারি
কবি নিলেশ মাজি
বসন্ত আজ রঙিন হল,
রংবাহারি সাজে।
পলাশ, বকুল, শিমুল রাঙা,
লজ্জাবতীর লাজে।
আকাশপানে রঙের বাহার,
আবির ঢাকা মেঘে।
ছাতিমতলার পাতার কোলে,
ঘুমোয় শালিক সুখে।
তারাও জানে রঙের লাগি,
প্রেমের সূত্রপাত।
প্রেম যে কেবল যুগলের নয়,
বিশ্বজনীন ডাক।
আজও আমরা সেজেছি আবার,
রঙিন ছদ্মবেশে।
রঙ - বেরঙে সৃষ্টি মোদের,
কৃষ্টিসম দেশে।
৩২.)
খোলা জানালা
কবি অমিতাভ মীর
খোলা জানালা পথে এক চিলতে সোনা রোদ-
চোখের কোণে স্বপ্ন জাগায় দখিনা বাতাস,
পৃথিবী সেজেছে ঝলমলে অপরূপা সাজে;
শঙ্খচিলের পালকে ভাসে ভোরের আকাশ।
গুলমোহরের শাখে কোকিলের কুহুতান,
বকুলের শাখায় ধরেছে বুলবুলি তান,
বাগানে ফুলের বুকে মৌ-চোরের গুঞ্জরণ;
গোলাপবাগে কলির ভেঙেছে ঘুমের ঘোর।
খোলা জানালার ওপাশে প্রকৃতি মনোহর,
এপাশে নিঃসঙ্গ কবির দৃষ্টি ছোটে সুদুর
পথের পারে। যেই পথে গিয়েছে প্রিয়তম;
কোন এক অমরায় রচেছে বাসর ঘর।
ভবনের খোলা জানালা আজও আছে খোলা,
দখিনা বাতাস, সকালের রোদ, জোছনার
আনাগোনা অবিরত। চোখের কোণের স্বপ্ন ;
দৃষ্টির খোলা জানালায় ঝুলে আছে এখনো।
৩৩.)
হোলির উচ্ছাস
কবি ভারতী ধর
আজ ফাগুনে পলাশ বনে চলছে হোলিখেলা,
ভ্রমরের দল গুনগুনিয়ে মাতায় সারাবেলা।
দখিন হাওয়া আমের বোলে দোলা দিয়ে যায়,
এলোমেলো পথরেণু উড়নি উড়ায়ে ধায়।
আপনমনে কোকিল কোকিলা কুহু কুহু ডেকে যায়,
প্রবীণ প্রবীণা নবীন নবীনা একাকার হয়ে যায়।
রঙের নেশায় সজনে ফুলেরা বেণী দুলিয়ে নাচে,
ফাগুনের চোখে দুষ্টু চাহনি উচাটন দেয় সিঁচে।
হোলির উল্লাসে উদাসী বাতাস পথরেণু ছুঁড়ে মারে,
দুঃখ কষ্ট উপচে আজিকে ধরার খুশি না ধরে।
৩৪.)
বসন্তের মিলন
কবি সুনীল কুমার মণ্ডল
ফাগুন রেগে আগুন হয়ে
পাঠায় দখিন বায়ু।
ঘাসের শিশির ভয়ে ভয়ে
আজ কমেছে আয়ু।।
বসন্ত আজ পলাশ ফুলের
ওড়নাখানি গায়ে।
কৃষ্ণচূড়া রাঙায় ঠোঁটে
পাতার নূপুর পায়ে।।
কোকিল কণ্ঠে মনে পড়ে
ফেলে আসা দিন।
চন্দ্রমুখীর কাছে জমা
না বলা সব ঋণ।।
বসন্ত আজ মিলন গানে
মুকুল গন্ধ গায়ে।
আয় বিরহী মিলবি যদি
দুখ বিলাসের নায়ে ।।
৩৫.)
আমি সেই বসন্ত
কবি অঙ্কুর
পথ চলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে যাওয়া,
বেলা শেষে আবার ঘরে ফেরা।
সকলকে রাঙিয়ে রঙিন মনে --
নিজেকে দিনরাত জাগিয়ে রাখা।
আবার ফিরে আসা নতুন রূপে,
কোনো এক ফাল্গুনের প্রভাতে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক শাখায় শাখায়,
আমি আসবো তোমার কাছে।
শুকনো পলাশের পাপড়ির গায়ে,
থাকবে লেখা আমি সেই বসন্ত।
শিমুল গাছে বসে থাকা কোকিলের সুর,
কী মধুর কণ্ঠে ডাকছে দেখো তোমাকে।
গোধূলির ঘরে সূর্য্যকে বন্দি করে,
নতুন ভোরের অপেক্ষায় বসে থেকো।
দূর দিগন্তে পাড়ি দিয়ে যাবো চলে,
পড়ে থাকা টুকরো ভালোবাসাকে সঙ্গে নিয়ে।
চৈত্রের অন্তিম ক্ষণে দাও বিদায়,
দেখা হবে আবার আগামী ফাল্গুনে।
আমি সেই বসন্ত --
৩৬.)
হলুদ বসন্ত
কবি কবিতা ভট্টাচার্য
শীতের শেষে গাছে ডালে
নতুন পাতা জন্ম নিলে
তুমি এলে পলাশ শিমূলে
আমি একা ছাতিম বনে।
আসা যাওয়ার পথের মাঝে
ডাইনে বাঁয়ে কোপাই ধারে
বাজে একতারা বাউল সুরে
উড়ছে পাখি বাতাস রোদে
মাঠে মাঠে ঘাসে ঘাসে
ফুলেরা কী কথা বলে
মন কেমনের মধু মাসে।
এখন বসন্ত দিনে দিনে কানে কানে
লুকোচুরি খেলা ফাগুনে ফাগুনে
কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়া আলিঙ্গন করে
এডালে ওডালে
সবকিছু মুছে যাক
শুধু হলুদ বসন্তে লেগে থাক..
চুম্বনের দাগ।
৩৭.)
বসন্ত দখিনা সমীরণে
কবি বিপ্লব গোস্বামী
আজি বসন্ত দখিনা সমীরণে
জাগিয়া তুলিল মরম ব্যথা,
আজি ক্ষণে ক্ষণে পড়িছে মনে
তব সনে ঘটা কত স্মৃতিকথা।
অমনি বসন্তের জোৎস্না ঝরা রাতে
পাশাপাশি তব সনে তমাল তলায়
কাটিয়াছে কত কাল একসাথে..
রঙের ফাগুন আর আবীর খেলায়।
মরিয়া গিয়া অঙ্কুরিত আদর সোহাগ
মৃত কামনা কীটে দহিছে সততঃ
বাজিছে হৃদয়ে আজি বেদনার রাগ,
বাঁচিয়া আছি নীলকণ্ঠ মহাদেবের মতো
৩৮.)
বসন্ত
কবি সুজন মন্ডল
শীতের শরীরে জমে থাকা
কুয়াশা'র ঘাম
চেটে খাচ্ছে
ফাল্গুনে'র সোনালী রোদ ।
এদিকে বসন্ত হেঁটে আসছে
ঝরাপাতা'র দেশে...
উলঙ্গ গাছের শরীরে
নবীন কিশোরে'র মতো হাত নেড়ে—
শীতের ছেড়ে দেওয়া দীর্ঘশ্বাসে!
বসন্ত সাজিয়েছে সংসার—
রাঙিয়েছে মুখ
পলাশ শিমুলে'র টাটকা রঙে!
শীতে'র চামড়া ফাটা
ক্ষতে'র ওপর—
বসন্ত'ই শুধু লিখতে পারে
ভালোবাসা'র কবিতা...
৩৯.)
বসন্ত বিকেল
কবি মৌসুমী ভৌমিক
শান্ত হরিণীর মতো এখন বসন্তের বিকেল
নিভৃতে খুনসুটি করে ক্লান্ত কোকিলের দল
কোন যুগের কোন অভ্যেসে ফুটেছে পলাশ
তীব্র রঙের আকুতি নিয়ে দোর্দণ্ড সাহস
বুক ফুলিয়ে দখলে রাখে বসন্ত বন্দন।
বড় শৌখিন এই বসন্ত বিকেল, মায়াময়
পড়ন্ত রোদের বালুকাবেলা বড় পদ্যময়
হলুদ বেলার অবকাশে যে সোনালি ইশারা
তার স্থায়িত্ব সন্দিহান হলেও সে তো সেতারা
সে এক প্রকৃতির খেয়াল, খুশির সম্মোহন।
এখন ফেরার সময় নয়, চেয়ে থাকো
যদি কিছু বাকি থাকে, তাকে ডাকো
কিছু না, এ বসন্তবেলায় চুপ থাকাই শ্রেয়
নিজেরই আড়ালে বসন্ত যে নিজেই অজেয়।
৪০.)
পাগলা হাওয়া
কবি সমীর দত্ত
ওরে ও পাগলা হাওয়া এটা তোর কেমন বওয়া,
কখনো উত্তরে যাস কখনো উল্টে যাওয়া।
কখনো কমিয়ে গতি কখনো তীব্র অতি
কখনো মধ্যলয়ে কখনো রুষ্ট মতি।
বৈশাখে কাল হয়ে যাস অনেকেই পায়না আভাস
রুদ্র মূর্তি ধরে করে যাস কতই যে নাশ।
কেউ হয় বাস্তুহারা কেউবা সর্বহারা
ঠাঁই লয় দেব চরণে যে সকল দুঃখ হরা।
বর্ষায় ভরসা হয়ে কৃষকের বন্ধু রয়ে,
উড়ায়ে যাস মেঘেদের মেঘ বারিতেই যে নেয়ে।
বনফুল হয়ে দুলদুল তরুদল দোলায় আঁচল,
মাতনে মেঘেরা সব চোখে নেয় আরো কাজল ।
৪১.)
তুমি ভিজতে চেয়েছিলে
কবি সৌমিত্র চ্যাটার্জী
তোমার কাছে চেয়েছিলাম পান্নারঙা দুপুর
তুমি তখন শশব্যস্ত দুই পায়েতে নুপুর
বলেছিলে সঙ্গে যাব অঙ্গে নেব জরি
মেঘের কোলে বিরাজমান হেমন্ত সাতনরী |
আমার মনে চিরবসন্ত উপচে পড়া ঢেউ
বুকের মাঝে বন ময়ূরী আর ছিল না কেউ |
সেদিন চৈত্রমাসে, তোমার চিকন শাড়ির ভাঁজে
ছড়িয়ে ছিল স্নিগ্ধ যুঁথি আজও মনে আছে |
গোলাপ গালের প্রতিচ্ছবি রোদের দর্পণে
উড়েছিলে বিহঙ্গমা একলা আপনমনে |
তুমি ভিজতে চেয়েছিলে আকাশভাঙ্গা জলে
সারাটা দিন অঝোরে বান নদীতে, বিলে, খালে|
অনন্ত আশ্লেষে বলেছিলে দিগন্তকে ছোঁবে
আকাশ এসে ধরা দিল স্ব-ইচ্ছায় স-গৌরবে |
ইচ্ছেডানায় ভেসে পথ গিয়েছ ভুলে
ভাসাই ডিঙি সাগরজলে তোমার হৃদয়ে পাল তুলে |
বললে তুমি হেসে, যাবে নিরুদ্দেশে
ঝড়ের দিশা বদলে গেল তোমায় ভালোবেসে |
জয়ের নেশায় বিভোর তোমার অভিভূত মন
তোমার জন্য ভুবন জুড়ে এত আয়োজন...
৪২.)
স্বপ্ননীড়
কবি কৃতিকণা
স্বপ্ন নামের নীলচে দ্বীপে
ছোট্ট মেঘের ঘর—
ঢেউয়ের ফেনার প্রাচীর ঘেরা,
ভালবাসার ছায়ায় ভরা
শয্যা বালুচর।
মালা গেঁথে তারার ফুলে
পরিয়ে দিলে খোলা চুলে,
সোহাগ ঢেলে ভরিয়ে দিলে—
আমার ওষ্ঠাধর।b
একাদশীর রাতের সে চাঁদ
সাক্ষী মাথার 'পর।
৪৩.)
না বলা অথবা
কবি ঋভু চট্টোপাধ্যায়
এভাবে বুকের আগুন জ্বালাতে পারিস
যেভাবে তুলি ক্যানভাস জুড়ে থাকে
একটা গহিন বন্য নদীর ধারে
যেভাবে হাজার স্বপ্ন ধরে রাখে।
এভাবে কেউ পাগল হতে পারে
যেভাবে মেঘ আকাশকে রাখে ফন্দি।
কাউকে ছুঁয়ে যাযাবর হতে পারি
আমিও তো সেই উদাসীন স্রোতে বন্দী |
৪৪.)
অদলবদল
কবি অভিষেক দত্ত মজুমদার
ধরো কখনো এমন কিছু হলো
আমার মনটা তোমার ভিতর গেলো
দেখবে তুমি তোমার চোখে
আমার মনটা সঙ্গে রেখে
বলো, তখন তোমার চোখ কি দেখতে পেলো ?
হঠাৎ যদি এমন বদল হয়
তোমার মন তোমার নিজের নয়
আমার মনের সব যাতনা
বুঝবে তখন কি বেদনা
দেখবে তখন মনের ভিতর কেমন হচ্ছে ক্ষয় ।
অদল বদল হয় না স্থায়ী জানি
হলোই যদি, দোষী আমি মানি
ইচ্ছে করে পাঠিয়ে আমার মন
বুঝতে ব্যথা, জ্বলতে কিছু ক্ষন
আমার মনের উথাল পাথাল জানতে একটু খানি।।
৪৫.)
ফাল্গুনী প্রাপ্তি
কবি আল্পনা চন্দ
বসন্ত দিনের অদ্ভুত ঘ্রাণ..
এই ফাল্গুনেই তো পাওয়া যায় !
এই ফাল্গুনই তো জ্বালা ধরায়
দেহে-মনে, বনে-বনান্তে,
আড়ালে-প্রান্তরে।
এই মধুমাস ফাগুন আমার
বড়োই অনন্যা..
এখানে আকাশ নীল,
সবুজে সবুজ প্রকৃতি..
কী ভীষণ উদাস !
কী অসম্ভব উদার !
আবার উদ্ভিন্নযৌবনা!
পুষ্পিত ঐ গাছগুলো যেন
সিঁদুরে লাল তাই,
ওদের মন এখন বড়োই খোলতাই।
বাসন্তী রঙে সে এক
মায়াবী জাদু জড়ানো,
বাউল মনটা সন্ন্যাসী হয়ে
কখনো সখনো..
নিরুদ্দেশী পথে ধায়।
ফাল্গুনে এ প্রাপ্তিযোগ
এও কিছু কম নয়।
৪৬.)
প্রেম
কবি ফটিক চৌধুরী
অবশেষে প্রেমই থাকে জেগে
ঘুমায় না, থাকে নিজের আবেগে
কখনো স্বপ্নে, কখনো ফুলে প্রজাপতি
এভাবেই মেলে ডানা, পেয়ে যায় গতি
বৃষ্টিতে এনে দেয় দুরন্ত প্লাবন
প্রেম মানে বর্ষা অঝোর শ্রাবণ
শতবাধায় এর আবেগ যায় না থেমে
অবরোধও মানে না প্রেম থাকে প্রেমেই।
৪৭.)
নিমিত্তমাত্র
কবি সুদীপ্ত সেন
তোমার সাথে গোটা শহর হেঁটে বেড়ানোর পর
আমার আর অন্যকারোর সাথে ঘুরতে ভালো লাগে না
কারণ তোমাকে মিস করি।
তোমার সাথে প্রথম কলেজ স্কোয়ারে ঠোঁট রেখেছিলাম
তারপর এবং তার আগে আর কারোর ঠোঁটে আমি ঠোঁট রাখিনি।
কারণ আমি এই স্বাদের বদল চাই না।
ঠিক বোরোলীনের গন্ধের মতো,
আজীবন একটাই স্বাদ পেতে চাই।
তোমার সাথে প্রিন্সেপঘাটে বসে যখন সন্ধ্যেবেলার প্রদীপের ভাসান দেখলাম সেই দেখাটা আমি আজও ভুলতে চাই না
কারণ আমি তোমার সাথেই ভাসতে চাই।
তোমার সাথে আমার ট্রামে চাপা হয়নি বেশি
তবে বাসে চেপেছি আর তারচেয়েও চেপেছি মেট্রোতে।
বিশ্বাস করো যেদিন তুমি আমার সাথে মেট্রোতে থাকো না
সেদিন আমার ফাঁকা লাগে
কারণ আমি মেট্রোকেও ভালোবাসি আবার তোমাকেও।
তোমায় কোলে চাপিয়ে মূয়রকুঞ্জের গাছে পিঠ ঠেকিয়ে
তোমার নিঃশ্বাসের প্রতিটা স্পর্শে যখন আমি ঋণী হচ্ছি
তখন সেই ঋণ আমার শোধ করতে ইচ্ছে করে না
কারণ ওইরকম ঋণের দায়ে আমি বিকিয়ে যেতে চাই বারবার।
সেবার তোমার রাগের কারণে নন্দনে
আমাদের ঝগড়া হয়েছিলো কিন্তু বিশ্বাস করো
ওইরকম ঝগড়া আমাদের না করাই ভালো
কারণ খুব একটা লাভ হবে না।
বরং তারচেয়ে কিছুক্ষণ চার্চে গিয়ে বসি। আরও একবার গার্ডের চোখকে ফাঁকি রেখে
প্রার্থনার সময় বুঝে ঠোঁট বসিয়ে তোমার ঠোঁটের ওপর তোমাকে স্পর্শ করি
যতক্ষণ না একটা মোমবাতি জ্বালানো হচ্ছে।
কারণ মোমবাতির মতো শুদ্ধ আগুন আর ঠোঁট স্পর্শ করা চুমুগুলো একই দেখতে।
দুটোই গলে গেলে অন্ধকার নেমে আসে।
তাতে প্রথমটাই চার্চ নিভে যায় আর দ্বিতীয়টাই উত্তেজনা।
সবই ওপরওয়ালার সৃষ্টি
আমরা নিমিত্ত মাত্র!
৪৮.)
কৃত্রিম ভালোবাসা
কবি রীনা ঘোষ
কত অবলীলায় তুমি বলে গেলে,
তুমি আমাকে চিনেছো, জেনেছো আমায়..
চর্ম চক্ষুতেই শুধু দেখেছো, হয়ে উঠেছো নিখুঁত বিচারক!
অথচ,আমার হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে রাখা
আর একটি অশান্ত পৃথিবী তোমার অদেখাই রয়ে গেল।
আমার মস্তিকের অলি গলি.. রাজপথ কিছুই ঘুরে দেখা হলোনা তোমার,
বাইরের রঙিন আবরণ তোমায় মুগ্ধ করেছে বারবার।
অথচ আমি কত আশা নিয়ে বসে ছিলাম,
বাইরের কৃত্রিম আবরণ ভেদ করে,
একদিন উঁকি দেবে তুমি আমার
একান্তে সাজানো হৃদয়ের রাজপ্রাসাদে।
তুমি আমার জীবনের বসন্ত টুকুই
শুধু উপভোগ করতে চেয়েছ,
শীত গ্রীষ্ম বর্ষায় তোমার তীব্র অনীহা।
তাই বলি কি? তুমি ফিরে যাও,
যে তুমি আমায় শীত গ্রীষ্মে অবহেলা করেছ,
আমার বসন্তেও তোমার কোনো অধিকার নেই।
৪৯.)
আলাপ
কবি কাঞ্চন বর্মন
রাত নামলেই গোটা শহরটা আমাদের ছাদে উঠে আসে ..
মুখোমুখি বসি অনেকক্ষণ ..
রাত গভীর হয় ..
আমরা একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেলি
৫০.)
কথা না রাখার কথা
কবি সুকান্ত পুলক বিশ্বাস
তোর চোখেতে আকাশ দেখি খেলার ছলে
তোর চুলেতে মুখটি লুকোই রৌদ্র এলে,
বেহিসাবি সময় যতো ঘড়ির কাটায়
তুই কী জানিস দিন কেটে যায় তোকে পেলে ?
বিকেল বেলায় বৃষ্টি যদি নূপুর ভেজায়
সত্যি করে বল না তাতে কী এসে যায় ?
খুনসুটি হোক সন্ধেবেলা চায়ের কাপে
চোখের কাজল সত্যি তোকে বড্ড মানায়।
আর তোর ওই দুষ্টুমিটা ভীষণ দামি
একলা পথে দু'হাত ধরে একটা হামি,
তোর হাসিটা কেমন যদি প্রশ্ন করিস
বলবো আমি, সূর্য যেন অস্তগামী।
যদিও তুই আজ বদলে গেছিস ঋতুর সাথে
আজও কী তুই দু'হাত রাখিস আমার হাতে?
যে হৃদয়ে তুই ফুল ফোটাবার কথা দিলি
এসে দেখিস ফুল ফোটে নি সুপ্রভাতে।
No comments:
Post a Comment