Saturday, 7 July 2018

১ম পর্ব


                         কবিতার ছন্দে
                ♥♥♥♥♪♪♪♥♥♥♥



সম্পাদকীয়-র মতো করে,

  "কবিতার ছন্দে" ফেসবুক গ্রুপ এক বছর ব্যাপী চলার পর আমাদের নতুন নিবেদন এই ব্লগরূপ। এখানে আমরা আমাদের প্রথম সংখ্যার উপস্থাপন করেছি।

এই উপস্থাপনায় দুই সপ্তাহ ব্যাপী সেরা সাপ্তাহিকী কবিতা গুলোকে তুলে ধরা হয়েছে আর সেই সঙ্গে কবিতার ছন্দের কিছু সদস্যদের কবিতাও রাখা হয়েছে।

আশা করব এই ব্লগ প্রচেষ্ঠা গ্রুপের মতো করেই আপনাদের ভালোবাসায় ভরে যাবে।

---------------/------/--------/--------
         দুই সাপ্তাহিকী সেরা গুলি

১.)
     । মামা।
---------আর্যতীর্থ

ন্যাকামি আর মারিস না তো! দেশ বলে যা ভাবিস এত,
অন্ধ এবং বুদ্ধি নাচার,পাসনা বোধহয় খবরটা তার,
দেশ মোটে নয় একটা গোটা, আদত জরাসন্ধ যে এ,
এই না বলে তাকান তিনি আমার দিকে প্রচন্ড সন্দেহে।”

আমার চোখের ধন্দ মেপে, পুনশ্চ যান তিনি খেপে,
বুঝিসনি তো ? বলেন তিনি , জিভে এবার ঢালেন চিনি,
এদেশ জুড়ে রঙের মানুষ , হয় সবুজ আর নয় গেরুয়া,
দুচার ছটাক ফেললে ছেঁটে, এই দুটো রঙ যাবে পাওয়া।

তো কি হলো? নিলাম ধরে, দুটো রঙই গ্রাম শহরে,
বেণীর মতন পাকিয়ে আছে, দিনযাপনে মাখিয়ে আছে,
ঘাত প্রতিঘাত যুদ্ধ সয়েও এ চিত্রটাই চলতে থাকে
তাই বলে এ জোড়াতালি, কেমন করে বলবো তাকে?

ধ্যাত্তেরিকা! আস্ত রে তুই বেকুব গাধা, দেশ যে বাঁটা আধা আধা,
বুঝিসও নি সে সত্যটা, আগে যাওয়ার পথ রে ওটা,
সোনার সে যুগ  আনতে হবে , তবে যদি আলো ফেরে,
সবার আগে দুইপা টেনে, দুই আধাতে ফেলবো ফেঁড়ে।

বলেই তিনি বেদীমূলে, দাঁড়ান উঠে আঙুল তুলে
বলেন আমায় চেন রে ব্যাটা, আমি আবার এমন ঠ্যাঁটা,
হাঁ করে চোখ কচলে দেখি কোন সিরিয়াল ধর্মড্রামা,
হঠাৎ তাঁকে চিনতে পারি, আরে এ তো কংস মামা!

দুই রঙ দেন বিভেদ করে, কংস তো নন, ধ্বংসমামা।


২.)
অবাক পৃথিবী
***********
        © বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস
   
প্রেমাবেগের দোলাচলে আপন উদ্দীপনায়
কলাপী তার কলাপ মেলি আপনারে নাচায়।

আবেগের ঊর্মিমালা আপনারে দোলায়,
সৈকতকে পরাতে মালা বালুকাবেলায়।

রঙধনু জানে না কত রঙ ধরে তার তনু;
অনন্ত আকাশ অবনীরে নমে হয়ে নতজানু।

ফিরোজা উষা সান্ধ্য গোলাপে
প্রভাকরে বুঝি আপনারে মাপে।

বিদ্যান পূজ্য বিদ্যার পরিমাপে,
জ্ঞানী বনে মূর্খ রাজনীতির চাপে।

জ্ঞানী গুণী চাটুকার  মূর্খের করে তাঁবেদারি ;
বিজ্ঞের শিরে মূর্খেই তোলে শানিত তরবারি।


  ৩.)
"বেঁচে থাক প্রাণে"
         সুজিত কুমার পাল
             
মেঘেরা মেলেছে ডানা   করে শুধু আনাগোনা
       নীলাকাশ ছেয়ে যায় বৃষ্টির ঘ্রাণে।
বাদল নেমেছে তীরে    পাখিরা গিয়েছে নীড়ে
         মাদল বেজেছে প্রাণে প্রাণে ।

ভিজেছে চোখের পাতা  পড়ে থাকে নীল খাতা
       শব্দেরা গেছে ভুলে কবিতার কথা।
    সঘন গগন সাজে   মন নেই কোন কাজে
         প্রাণেতে জেগেছে বড়  ব্যথা।

  কান্না অঝোরে ঝরে   তার কথা মনে পড়ে
           হৃদয় মেদুর হয় বর্ষার রাতে।
     মন বলে ফিরে আয়   যন্ত্রণা তত পাই
              তবু হাত রাখে না হাতে।

অপরাজিতার বনে   মন শুধু জাল বোনে
      সুশোভন হয়ে ওঠে কদম্বের ফুল।
 তারপর সন্ধ্যা নামে   প্রেমহীন ধরা ধামে
            মনে হয় সব যেন ভুল।

    মন-প্রাণ চেয়ে রয়   যন্ত্রণা সবই সয়
          মরেও মরে না বৃথা আশা।
  হারিয়েছি আমি সব  পড়ে থাকে স্বপ্ন সব
      তবু বেঁচে থাক ভালোবাসা।

৪.)
     দারুব্রহ্ম
** কলম-এ : শুভদীপ পাপলু

অকালবর্ষণ তুমি,ভ্রান্তি বিচ্ছিন্ন করেছে জরায়ু'কে
প্রচুর যন্ত্রণায় তুমি,নদীর মতো,গতিশীল হতে বুকে
মৃদুস্বর শোনা গেলো,প্রতিশোধে ভিন্ন নরখাদকরাও
অক্ষাংশে যত রক্তের ছাপ,বাঁশি বাজিয়ে শুনিও।

রজঃস্বলা তুমি,তাই কবির ঘরে নিস্তব্ধ ভাতের হাড়ি
অন্তর্যামী জোনাকি হয়তো-আর হবে না,নৈশপ্রহরী
মা-স্রোত মেশে মোহনায়,নারী মেশে নবাবী পালঙ্কে
শুকতারা মুখ ঢাকে,যখন রাত হত্যা ভাঙে লিরিকে

বরং সমাধি দাও,উপমায় শক্ত করে বাঁধো রশি
সাতপাকে কোন প্রতিজ্ঞা ছিলো তা লিখতে বসি
সব দাগ মিলিয়ে গেলো,রইলো বাকি আত্মসমর্পণ
কী পথে চলবে সংসার,দ্বিখন্ড তুমি,বা দেবারিগণ!

অকালবোধন আমি,আমিও সময়'কে নিলাম চিনে
নিহত ভোরে কবি হাঁটে,আলো নেভে ব্যর্থ সাইরেনে

৫.)
  কবিতা – গোপন সৌরভ
     কবি  -  স্বপন গায়েন
********************
পাগল হাওয়া ভুলে গেছে রোদ ভালোবাসা আজ মায়া
কিশোরীর শাড়ি আগছালো বুকে এঁকেছে স্বপ্ন কায়া।

সবুজ পাতায় রামধনু রঙ হেসে খায় লুটোপুটি
হৃদয় চন্দনে লিখেছি নাম দেবো না কখনো ছুটি!

আগুণ মাড়িয়ে স্পর্শ  দিয়েছি পেয়েছি গোপন সৌরভ
তোমার নিঃশ্বাসের বিষ পান করে পেয়েছি যত গৌরব!

শরীরে খুঁজি উপমহাদেশ  সাজানো সুখের বন্দর
মহা সাগরে দাঁড়িয়ে জাহাজ ফেলবে সেখানে নঙ্গর!

হৃদয় বীণায় সুর ভুলেছে অনাহুত আমি এক নাবিক
দিগন্ত জুড়ে জল শুধু জল মায়া নয় সবই স্বাভাবিক!

৬.)
 | প্রতিবাদ |
        অমল কুমার বর্মন

কোটি কোটি মানুষের লালসার চোখ,
ব্যস্ত,অস্থির চিত্তে করতে চায় ভোগ।
যেন ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি,
দ্রুত উপরে উঠে স্নায়ুর সিঁড়ি।
যেন মরা জোছনায় ঘুমায় কীট-পতঙ্গ,
নরকের মেঘে হাসে যেন মৃত্যুর তরঙ্গ।

প্রকৃতি করতে চায় প্রতিবাদ,
সিংহের গর্জনে চঞ্চল থাবা,যেন প্রতিঘাত।
কোটি কোটি কীট,
যেন লক্ষ লক্ষ লাল ইট;
দাঁড়ায় আড়াআড়ি,
যেন তরবারি।

৭.)
   "তিরিক্কি "
       -  কৌশিক গাঙ্গুলি ।

১ @ অঙ্ক শিখিনি তাই
কবি সেজে ভোলাতে চাই
বাজে অভিনয় ধরা পড়ে যায় ।
২ @ ইতিহাস জানতে গিয়ে
ভূগোলটা ভুলে গেছি তবু
ঠিক বাড়ি ফিরে আসি ।
৩ @ জীবনটা জটিল ধাঁধা
ভবিষ্যত না গুছিয়ে আমি
কবিতার প্রেমে পাগল ।


৮.)
| " ভুল "  |      
    @গঙ্গোত্রী >>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

হ্যাঁ, আমি রোজ রোজ ভুল করি
পূর্বেও অনেক ভুল করেছি
আবার ভবিষ্যতে ও আরো ভুল করবো
কারণ ভুল করাটা আমার অভ্যাস!

কৈশোরে অজান্তে করেছি অনেক ভুল
প্রৌঢ়েত্বে পূর্বের মাশুল গোনার ভুল
আর মাঝে যৌবনে মনের আগুনে ফিনিক্স পাখিটাকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করেছি যতবার,
সিসিফাসের পাথরের ন্যায় আবার জন্মেছে,
এই জন্ম আর মৃত্যুর ঠিক ঐ সময়টা ছিল
আমার ভুলে ভরা----

হ্যাঁ, আমি ভুল করি

দানবকে মানব ভেবে
ঘৃনা কে ভালোবাসা ভেবে
স্বপ্নে রূপোলি বালির চরে ঘুরতে গিয়ে
রূপোলী প্রলোভনে ভুলে আর বাড়ি ফেরা হলো না-----কি মারাত্মক ভুল করেছিলাম!
শিয়ালকে বিড়াল ভেবে ভালোবেসে ভুল করেছি  একবার,
আর অমানুষকে মানুষ ভেবে ভুল করেছি  শতবার

হ্যাঁ, আমি ভুল করি!

শ্লোগানকে জয়গান ভেবে ভুল করি
কিছূ সময়ের বিহ্বলতায়,
আবার রাজনীতিকে নীতি ভেবে বড় ভুল করেছিলাম অনভিজ্ঞতায়,
ভালোবাসাকে অপাত্রের বোয়ামে ভুল করে
ভরেছিলাম আন্দাজের অদূরদর্শিতায়।

প্রবঞ্চককে ঘরে ডেকে ভুল করেছিলাম
উষ্ণতার আলিঙ্গনে----
অনুশোচনার মোড়কে ভুল করে মুড়তে চেয়েছিলাম ভালোলাগাকে।
হ্যাঁ আমার এক সাংঘাতিক রোগ
আমি ভুল করি বিশ্বাস-অবিশ্বাসে,
নিশ্বাস- প্রশ্বাসে।

৯.)
  |" বিপন্নতা "|
      কবি :- শ্রী  অমিতাভ কর ॥
     
  শরীর যখন শরীর খোঁজে
      শরীরী আশ্লেষে,
 যন্ত্র  তখন  যান্ত্রিকতায় ,
     অক্লেশে তা পেষে ॥

কথা  যখন  হারিয়ে  কথা
      শুধুই  কথকতা ,
নীরব থেকেও সরব তখন
       মৌন মুখরতা ॥
         

১০.)
  কবিতা-উপলব্ধি
কবি-মধুরিমা মুখোপাধ্যায় রায়
*******
কখনত্ত  কখনও আসেনা-
প্রাণে খুশীর কলতান,
কোনও মুহুর্তে থমকে যায়,
জীবনের হাসিগান।

মুহুর্তে সুখ,মুহুর্তে দুখ,
আজব জীবনরঙ্গ,
সুখস্বপ্ন  কল্পনা,
বাস্তব স্বপ্নভঙ্গ ।

সহ্যজালে জীবন বদ্ধ-
জীবন মানে লড়াই,
আজকে রাজা,কালকে ফকির-
বৃথা এত বড়াই।

সঙ্গে যায় না রত্ন-অর্থ,
যায় না পরিজন,
রেখে যায়  আত্মছবি,
ক্ষণ মাত্র ছুঁলেও অপর মন।

জীবন মানে আলেয়া যে,
মরণ কখনও সুখের,
জীবন্মৃত  হওয়ার চেয়ে-
জীবনান্ত  হয়ত সমাপ্তি সকল দুখের।

সঞ্চয় করে অর্থ হয়ত-
অনর্থ ই সার,
ধৈর্য্য গুনে পেরোনো শুধু-
জীবন পারাবার।


-------------সদস্য কলম------------------

1.)
বৃষ্টি নামুক
মৌসুমী ভৌমিক
**************
শ্রান্ত পলকে অবুঝ মন
দুরন্ত ইচ্ছেরা খোঁজে সুখ
সবুজ ভাবনা মেলে ডানা
অচিন দেশে মধ্যাহ্ন বুক।

নক্সী কাঁথা ছবি আঁকে
স্বপ্ন ছুঁয়ে মৌন মিছিল
নরম ঘাসের নিরাভরনে
আলতো হাসে ওই গাংচিল।

ক্লান্ত  পথিক অস্থির বড়
তবু মনে ভাটিয়ালী গান
নিষ্পলক চোখে নির্জন সরণী
জ্যোৎস্না জলে অলীক স্নান।

বৃষ্টি নামুক বৃষ্টি নামুক
শীতল স্পর্শে ভরুক বুক
বধির মনে শ্যাওলা ধুয়ে
শান্ত লালিত্য আবার হাসুক।

২.)
  খেয়াল
----------কলমে---রীতা রায়
খোলা ডাইরিটা পড়ে আছে একলা
মুঠোফোনে কথা ফিরে ফিরে আসে,
কবিতারা গেছে বুঝি ডানা মেলে?

সোনাঝুরির অন্ধকার গায়ে মেখে
ছুটে চলে অন্য কোনো নিকেতনের খোঁজে,
মাধবী কুঁড়ি ঝরে পড়ে অকালে...

ছিটেফোঁটা বৃষ্টির সাথে হেঁটে আসা
   অভ্যেসে..
ছোটবেলার আড়িগুলো ভাব হয়ে
            যেতো যেভাবে,
বেড়াতারে ছাতিম ছায়া দীর্ঘশ্বাস                  
                                     ফেলে...
.
অনাহত সময় এড়িয়ে যায় পাশকেটে
সম্পর্কের বাঁধন ছিঁড়ে  ইতি টানে,
 বড়বেলার ভাবগুলো আড়ি হয়ে
                                যায় খেয়ালে।

3.)

বিভেদের রঙ বিন্দু
-------------------- (ডট.পেন)

কড়া নেড়েছিল তারা, কড়া নেড়েছিল দরজার
ছুঁয়ে দিয়েছিল জল আর  প্রার্থনা শুনে গির্জার।

এরপর কত প্রশ্ন, কত গেরুয়ার রঙ ফিকে,
কত রঙ রঙিনের কার্তুজ আর পতাকা দিকে দিকে।

 বলে গেল তুমি আল্লার আর কেউ বলে গেল হিন্দু
আজ তোমাদের এতো প্রশ্নে বিভেদের রঙ বিন্দু!





No comments:

Post a Comment